
স্বাধীনতার পরে ১৯৭৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম হাতে লিখিত পাসপোর্ট চালু হয়, কিন্তু সময় পরিবর্তনশীল, সমগ্র বিশ্বের সাথে তাল চলতে চলতে ২০১০ সালের পহেলা এপ্রিল বাংলাদেশে শুরু হয় এমআরপি (MRP) বা (Machine Readable Passport) পাসপোর্ট। তখন বাংলাদেশের পাসপোর্ট এর এগ্রযাত্রা শুরু হয়।

বাংলাদেশ ডিজিটাল হচ্ছে সেটার আরো একটি নিদর্শন হলো ২০২০ সালের ২২ই জানুয়ারি-তে ই-পাসপোর্ট (Electoric Passport) এর শুভ উদ্ভধন হয়। প্রায় ৪০টি স্তরের নিরাপত্তা সংবলিত ই-পাসপোর্ট এর আবেদন করা যাবে এখন ঘরে বসেই খুব সহজেই। আপনি যদি নিজে না করতে পারেন, তাহলে আপনি আমার দেখানো ধাপ গুলো অনুসরণ করুন, আশা করছি আপনি নিজেই ঘরে বসেই করে ফেলতে পারবেন।
E-Passport Online Registration Full Process in Bangla
এই লিংক এ ক্লিক করুন।
ধাপ-১ঃ “Are you applying from Bangladesh?” এখানে “Yes” এ ক্লিক করুন। (1) , (2) থেকে যথাক্রমে আপনার জেলা এবং উপজেলা নির্বাচন করুন এবং “Continue” তে ক্লিক করুন।
ধাপ-২ঃ আপনার ব্যবহৃত সঠিক একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস দিন। এবার গুগল ক্যাপচা পূরন করুন এবং “Continue” বাটনে ক্লিক করে সামনে অগ্রসর হউন।
ধাপ-৩ঃ
(1) সর্বনিম্ন ৬ সংখ্যার পাসওয়ার্ড দিন
(2) পুনরায় আপনার ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড দিন।
(3) “Full name (as per NID/BRC)” এই বক্সে আপনার এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট অনুযায়ী সম্পূর্ন নাম লিখুন (যেমনঃ MD. ABUL HOSSAIN )।
(4) “Given name (optional)” এই বক্সে আপনার নামের প্রথম অংশ দিবেন (না দিলেও হবে)। যদিই দিতে হয় তাহলে নিচের ছবিটি লক্ষ করুন (যেমনঃ MD. ABUL )।
(5) “Surname” এই বক্সে আপনার নামের শেষের অংশ দিবেন (যেমনঃ HOSSAIN )।
(6) “Bangladeshi mobile phone number (optional)” এই বক্সে বাংলাদেশে ব্যবহৃত বৈধ এবং চলমান নাম্বার দিন, না দিলেও হবে।
(গুগল রিক্যাপচা পূরণ করুন)
(7) এবার আপনার “Create Account” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৪ঃ আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস এর ইনবক্স চেক করুন, সেখানে একটি ইমেইল পাঠানো হবে আপনার অ্যাকাউন্টটি অ্যাক্টিভ করার জন্য। যদি খোজে না পান, তবে আপনার ইমেইলের স্প্যাম বক্স চেক করুন, এর পরেও না পেয়ে থাকলে “Resend” বাটনে ক্লিক করুন।এবার আপনার অ্যাকাউন্টটি অ্যাক্টিভ করুন, এর পরে আবার ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করুন। “Apply for a new e-Passport” এই বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপঃ-৫ঃ আপনি যদি আপনার নিজের জন্য (যেই নাম দিয়ে প্রথমে অ্যাকাউন্টটি ওপেন করেছেন) করে থাকেন তাহলে আপনি “I apply for myself” এই চেকবক্স-এ “টিক[✔]” করে দিন।
- আপনার লিঙ্গ সিলেক্ট করুন (যেমনঃ MALE)।
- যদি আপনি নিজের জন্য ই-পাসপোর্টের অ্যাপ্লাই করে থাকেন, তবে আপনার নাম বসাতে হবে না, আর যদি আপনি অন্য কারো জন্য অ্যাপ্লাই করে থাকেন তাহলে পূর্বের দেখানো নিয়ম ( ধাপ-৩ এর (3) থেকে (5) পর্যন্ত) অনুসারে পূরণ করুন। )
- “Select profession” এই বক্সে আপনার পেশা নির্বাচন করুন। আপনি কি করেন সেটি (যেমনঃ STUDENT)।
- “Select religion” এই বক্সে আপনার ধর্ম নির্বাচন করুন (যেমনঃ ISLAM)।
- “Select country of birth” আপনার দেশ নির্বাচন করুন ( যেমনঃ BANGLADESH)।
- “Select country of birth” আপনি যেই জেলাতে জন্মগ্রহন করেছেন সেই জেলা নির্বাচন করুন (যেমনঃ KSIHROEGANJ)।
- “Select date of birth” আপনার জন্ম তারিখ নির্বাচন করুন আপনার এনআইডি/ জন্মনিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী (যেমনঃ 08/05/1995)।
- “Select date of birth” আপনার নাগরিত্ব কোন ধরনের সেই ধরন অনুযায়ী আপনি নির্বাচন করুন। ধরে নিচ্ছি আপনি বাংলাদেশেই জন্য গ্রহন করেছেন, তাই এখানে “BY BIRTH” ব্যবহার করা হয়েছে। এটি পাত্রভেদে ভিন্ন হতে পারে।
- “Do you have passports of other countries?” এখানে আপনার যদি অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট না থাকে তাহলে আপনি “ No, I don’t have” এটিতে চেক দিবেন, আর যদি থেকে থাকে তাহলে আপনি “Yes, I have another passport” এটি তে চেক দিবেন এবং আপনার অন্য দেশের পাসপোর্ট এর সকল তথ্য দিবেন।
- “National ID No” এখানে আপনার এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধনের নাম্বারটি লিখবেন। “Save and Continue” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৬ঃ আপনার পূর্বের এমআরপি বা ইপাসপোর্ট আছে কি সে অনুযায়ী তথ্য দিন, যদি না থাকে তাহলে ‘No, I don’t have any previous passport / handwritten passport” এখানে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হউন।
ধাপ-৭ঃ “Permanent address” এখানে আপনার ঠিকানা দিতে হবে সঠিক ভাবে, তাই নিচের ধাপগুলো ভালভাবে অনুসরণ করুন।
- “Select district” এখানে আপনার স্থায়ী জেলা নির্বাচন করুন।
- “City/Village/House” আপনার গ্রাম/বাড়ির নাম যা আপনার এনআইডি/ জন্ম নিবন্ধনে উল্লেখ করা আছে, সেটি দিন।
- “Road/Block/Sector (optional)” এখানে আপনার ঠিকানার রোড নাম্বার/ ব্লক/ সেক্টর যেটি আপনার ঠিকানা হবে সেটি দিন (না দিলেও চলবে)।
- “Select post office” আপনার পোস্ট অফিস নির্বাচন করুন।
- পোস্ট অফিসের সাথে সাথে নিচের পোস্টকোডও চলে আসবে তাই সেটি আপনাকে দিতে হবে না।
- “Select police station” আপনার থানা নির্বাচন করুন।
আপনার বর্তমান ঠিকানা সঠিক ভাবে দিন, সেখানে পুলিশ এসে আপনাকে যাচাই করে নিবে, যদি আপনার ঠিকানা সঠিক না হয়, তাহলে আপনার এনআইডি ভেরিফিকেশন বাতিল হয়ে যাবে।
- “Present address is the same as Permanent” আপনি যদি আপনার স্থায়ী ঠিকানাতেই বসবাস করে থাকেন, তাহলে আপনি এখানে চেক মার্ক দিন। তাহলে কোনো ঠিকানা নতুন করে বসাতে হবে না।
- “Regional Passport office (RPO)” এটি তে ক্লিক করুন, যদিও এটিতে ক্লিক করা থাকে, আর যদি আপনি বাংলাদেশ মিশন-এ অ্যাপ্লাই করতে চান তাহলে ‘Bangladesh Mission” এটিতে চেক মার্ক দিন।
- “Save and Continue” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৮ঃ“Parental Information” এখানে আপনার বাবা-মা অথবা আপনার অভিবাভকের তথ্য দিতে হবে।
- “Father Information” যদি আপনার বাবার কোনো তথ্য না থাকে তাহলে “Unknown” এ (টিক[✔]) দিন।
- “Father’s name (as per NID/BRC)” আপনার বাবা-র তথ্য থেকে থাকলে আপনার এনআইডি/ জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী আপনার বাবার নাম লিখুন।
- “Select profession” আপনার বাবার পেশা নির্বাচন করুন।
- “Nationality” আপনার বাবার নাগরিত্ব কোন দেশের সেটি নির্বাচন করুন।
- “National ID No. (optional)” আপনার বাবা র এনআইডি কার্ড এর নাম্বার দিন। না দিলেও হবে।
এখন আপনার মা’এর তথ্য দিতে হবে। যদি মা’এর তথ্য না থাকে তাহলে “Unknown” এ (টিক[✔]) মার্ক দিন। আর যদি থেকে থাকতে তাহলে সামনে অগ্রসর হউক।
- “Mother’s name (as per NID/BRC)” আপনার এনআইডি কার্ড অনুযায়ী আপনার মায়ের নাম লিখুন।
- “Select profession” আপনার মা’য়ের পেশা নির্বাচন করুন।
- “Nationality” আপনার মা’য়ের নাগরিত্ব কোন দেশের সেটি নির্বাচন করুন।
- ‘National ID No. (optional)” আপনার মা’য়ের এনআইডি কার্ড এর নাম্বার দিন। না দিলেও হবে।
আপনার যদি কোনো অভিবাভক না থাকে তাহলে “Not applicable” এ (টিক[✔]) মার্ক দিন। আর যদি থাকে তো বাবা মা’র মতই এখানে একই ভাবে তথ্য দিয়ে সামনে অগ্রসর হউন।
- “Save and Continue” বাটনে ক্লিক করে সামনে অগ্রসর হউন।
ধাপ-৯ঃ “ Select marital status” আপনি যদি অবিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে “SINGLE” নির্বাচন করুন। আর যদি আপনি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তাহলে “MARRAID” নির্বাচন করুন, এভাবে আপনার ক্ষেত্রানুযায়ী আপনার বৈবাহিক অবস্থা নির্বাচন করুন এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য দিয়ে “Save and Continue” বাটনে ক্লিক করে সামনে অগ্রসর হউন।
ধাপ-১০ঃ “Emergency Contact” জরুরী প্রয়োজনে কার সাথে যোগাযোগ করা হবে সেই তথ্য এখানে দিতে হবে, নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করুন।
- “Select emergency contact relationship” এখানে আমি “BROTHER” নির্বাচন করেছি, আপনারা আপনাদের প্রয়োজন মত ব্যক্তিকে নির্বাচন করবেন।
- “Name (as per NID/BRC)” তার* এনআইডি/ জন্মনিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী তার নাম লিখবেন সম্পূর্নটি।
- “Select country” তার* দেশের নাম নির্বাচন করবেন।
- “Select district” তার* জেলা নির্বাচন করুন।
- ‘City/Village/House” তার* গ্রাম/শহর/বাড়ি র নাম লিখুন।
- ‘Road/Block/Sector (optional)” তার* ঠিকানার রোড/ ব্লক/সেক্টর ইত্যাদি যদি থাকে তাহলে লিখুন (না দিলেও হবে)।
- “Select post office” তার* পোস্ট অফিস নির্বাচন করুন (পোস্ট কোড আপনা আপনি চলে আসবে)।
- “Select police station” তার* থানা নির্বাচন করুন।
- ‘Email address (optional)” তার* যদি কোনো ইমেইল অ্যাড্রেস থাকে তাহলে সেটি দিন।
- “Select country code” তার* দেশের মোবাইল কোড নির্বাচন করুন।
- “Contact number” তার* চকন্টাক্ট নাম্বার দিন।
- “Save and Continue” বাটনে ক্লিক করুন।
* এখানে “তার” বলতে যাকে আপনি জরুরী প্রয়োজনের পাত্রি হিসেবে দিবেন তাকে বুঝানো হয়েছে।
ধাপ-১১ঃ “Passport Options” আপনার প্রয়োজন মত আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ এবং আপনার পাসপোর্ট এর পেইজ নির্ধারন করুন। সেটি হতে পারে নিম্নরূপঃ
Passport Pages | Validity |
48 Yages | 5 Years |
64 Pages | 10 Years |
এখানে আপনার পাসপোর্ট নির্ধারনের ধরনের উপর ভিত্তি করে টাকার পরিমান কম বেশি হবে। আপনি সর্বশেষ পাসপোর্ট এর ফিস সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন। “Save and Continue” বাটনে ক্লিক করে সামনে অগ্রসর হউন।
ধাপ-১২ঃ “Delivery Options” এখানে আপনি আপনার পাসপোর্টটি কত দ্রুত নিতে চান সেটি নির্বাচন করুন। যেমনঃ
Delivery Options | Delivery Time |
Regular Delivery | Within 21 Working Days |
Express Delivery | Within 10 Working Days |
Super Express Delivery | Within 2 Working Days |
এবার আপনার পছন্দ অনুযায়ী আপনি Delivery Options নির্বাচন করে “Save and Continue” বাটনে ক্লিক করে সামনে অগ্রসর হউন।
ধাপ-১৩ঃ এবার আপনার সকল তথ্য সমূহ দেখতে পারবেন প্রিভিউ হিসেবে, ভালো করে দেখুন কোথাও কোনো ভুল আছে কিনা, ভুল থাকলে পুনরায় ঠিক করুন। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে “Confirm and proceed to payment” এই বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-১৮ঃ “Payment” অপশন থেকে অনলাইন বা অফলাইন পেমেন্ট সিলেক্ট করুন, কোন কোন ব্যাংক এর মাধ্যমে অফলাইনে টাকা পে করা যাবে সেটি নিম্নরূপঃ
- ওয়ান ব্যাংক
- প্রিমিয়ার ব্যাংক
- সোনালী ব্যাংক
- ট্রাস্ট ব্যাংক
- ব্যাংক এশিয়া
- এবং ঢাকা ব্যাংক
আপনি চাইলে “অনলাইন” এর মাধ্যমে কিভাবে পেমেন্ট করবেন সেটি নিয়ে আরেকটি ব্লগ পাব্লিশ করা হয়েছে। এই লিঙ্ক থেকে দেখে আসতে পারেন। এবার আপনি “Continue” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-১৮ঃ** “Schedule Appointment” এ ক্লিক করে আপনার সময় মত সিডিউল নিন, অবশ্যই আপনাকে সেই সময়েই বায়োমেট্রিক এনরোল্মেন্টের জন্য উপস্থিত থাকতে হবে, তাই আপনার একদম সঠিক সময় নির্বাচন করুন। “Schedule Appointment” ডাউনলোড করুন। “Print Summary” তে ক্লিক করে সেটি ডাউনলোড করুন এবং “Download Application Form for Printing” এ ক্লিক করে ডাউনলোড করুন।
সকল ডাউনলোডকৃত ফর্ম গুলো প্রিন্ট করুন এবং সাথে আপনার পেমেন্টের স্লিপটিও প্রিন্ট করুন। এগুলো নিয়ে আপনি আপনার নির্বাচিত আঞ্চলিক/ বাংলাদেশ মিশনে যথাসময়ে চলে যান।
** “Schedule Appointment” অফিসিয়ালস দের জন্য প্রযোজ্য নয়
অনেক বড় করে ফেলেছি লিখাটি, তবু চেষ্টা করেছি ভালোভাবে আপনাদের বুঝানোর জন্য, এর পরেও যদি আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করুন। আর যাদের ই-পাসপোর্ট দরকার বলে আপনি মনে করেন, তাদের কাছে এই ব্লগটি শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।